বিশ্বজিৎ দাস বিজয়
জধানীর বাবুবাজার সেতুর ঠিক নিচে মিটফোর্ড হাসপাতালের পাশে এমন বেশ কিছু ভাসমান হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলের কথা সামাজিক মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন সময় উঠে এলেও এখনো অনেকেই জানেন না যে, এখানে মাত্র ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০ টাকায় রাত্রিযাপন করা যায়।
দূর থেকে হোটেলগুলো দেখলে মনে হবে কোনো দোতলা নৌকা। তবে এগুলো ভাসমান হোটেল বলেই দাবি সংশ্লিষ্টদের। সেই হোটেলে উঠার জন্য কাঠের সিঁড়ির ব্যবস্থা আছে। মিডফোর্ট হাসপাতাল নৌকাঘাট এলাকা ঘুরে এমন ৪টি ভাসমান হোটেলের দেখা মেলে। যা নিম্ন আয়ের মানুষের থাকার আশ্রয়স্থল। মূল্যস্ফিতির এই সময়ে এত কম খরচে থাকার ব্যবস্থা দেশে বিরল।
এমন একটি হোটেল ফরিদপুর মুসলিম বোর্ডিংয়ের মালিক মোহাম্মদ মোস্তফা মিয়া জানান, ১৯৬৪ সালে এ ব্যবসা শুরু হয়েছিল। তখন কাঠের নৌকা ছিল। ১৯৭৪ সালে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ট্রেড লাইসেন্স মেলে। সে সময় এসব হোটেলে পাল্লায় মেপে ভাত বিক্রি হতো।
বর্তমানে রাত্রিযাপনের জন্য একজনকে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা খরচ করতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, দুই তলাবিশিষ্ট হোটেলে এখন প্রায় ৫০টি কক্ষ রয়েছে। সিঙ্গেল কেবিনের জন্য খরচ হয় দৈনিক ১২০ টাকা ও ডাবল কেবিনের জন্য খরচ হয় ১৫০ টাকা। এখন খাওয়া-দাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। সর্বনিম্ন ৫০ টাকা খরচ করে যে কোনো পুরুষ হোটেল থাকতে পারবেন। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে কোনো নারীকে হোটেল থাকার সুযোগ দেয়া হয় না।
রুমগুলো ছোট হলেও নিম্ন আয়ের মানুষেরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই এখানে থাকতে পারেন। মোস্তফা বলেন, মানুষের থাকার মতো মোটামুটি সব ব্যবস্থা আছে। ভাড়া অল্প হলেও এ সব হোটেলে যারা থাকেন, তারা কম সুযোগ-সুবিধা পান না। লেপ, কম্বল, তোশক, বালিশ, বিশুদ্ধ পানি, মোবাইল চার্জারসহ প্রায় সব ধরনের বৈদ্যুতিক সুবিধার ব্যবস্থা আছে।
ভাসমান হোটেলে রাত্রিযাপনের জন্য দেয়া হয় লেপ, কম্বল, তোশক, বালিশ।
ঘরগুলো ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা থাকলেও শেষ রাতের দিকে চোর-ডাকাতের ভয়ে বন্ধ রাখা হয় বলেও জানান মোস্তফা। তিনি আরও বলেন, বর্তমানের ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে। তাই খরচ বাঁচাতে ফেরিওয়ালা, রিকশাচালক, ভ্যানচালক ও রোগীর স্বজনরা এসব হোটেল বেছে নেন। অনেকে শখের বশেও হোটেলে ঘুরতে আসেন।
শরীয়তপুর মুসলিম বোর্ডিংয়ের কর্মচারীরা জানান, কম টাকায় থাকার সুযোগ পেয়ে নিম্ন আয়ের মানুষদের ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে এসব ভাসমান হোটেল। অনেক মানুষই এখানে রাত্রিযাপন করেন। মানুষের থাকার জন্য প্রায় সব ধরনের ব্যবস্থাই রয়েছে এখানে। নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে হোটেলগুলো গরিবের হোটেল বলে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে।
একটি হোটেল রাত্রিযাপন করা ফেরিওয়ালা সোলেইমান হোসেন বলেন, গত কয়েক মাস ধরে ভাসমান হোটলে থাকছি। সারাদিন ফেরি করে পণ্য বিক্রি করে রাতে এখানে চলে আসি। খাওয়া-দাওয়া বাইরে করতে হয়। নদীর ওপর থাকতে ভালোই লাগে। মাঝে মাঝে নদীর ঢেউয়ে নৌকা দোল খায়। তাছাড়া নদীর দৃশ্য দেখতে ভালোই লাগে। কোনো কোলাহল নেই। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মশা।
রিকশাচালক তপন জানান, আগে রাস্তায় বা গ্যারেজেই রিকশার মধ্যে ঘুমিয়ে থাকতাম। তবে এখানে কম খরচে থাকার সুযোগ পাওয়ায় এখানে থাকছি। পরিবেশও নিরাপদ। তবে শীতের সময় নদীর পানি ময়লা হওয়ায় কিছুটা দুর্গন্ধ লাগে। তাছাড়া থাকার পরিবেশ খুবই ভালো।
কথা হয় মিডফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক রোগীর স্বজন কনকের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাসপাতালে রাতে রোগীর সঙ্গে একজনের বেশি থাকা যায় না। কোনো আবাসিক হোটেলে থাকতে গেলে অন্তত ৫০০ টাকা গুনতে হবে। তবে এই হোটেলগুলোতে মাত্র ১৫০ টাকায় রাতে আরামে থাকা যায়।